আসল তালমিছরি চেনার উপায়-তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা



আমাদেরকে আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানা ও তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। কেননা বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় তালমিছরি আকর্ষণীয় রং, সাদ ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য তালমিছরিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা অনেক। তাল মিছরি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য নানান দিক দিয়ে খুব উপকারী হয়ে থাকে।

আসল তালমিছরি চেনার উপায়-তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা

তবে এই উপকারিতা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই আসল তালমিছরি বাজার থেকে কিনতে হবে। তা না হলে তাল মিস্ত্রি খাওয়ার উপকারিতার পরিবর্তে অপকার বয়ে আনতে পারে। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আসল তালমিছরি চেনার উপায় ও তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

পেইজ সূচি: আসল তাল মিছরি চেনার উপায় ও তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা।

আসল তালমিছরি চেনার উপায়

তালমিছরি এক ধরনের প্রাকৃতিক চিনি। তালমিছরি অনেক উপকারিতা রয়েছে। তালমিছরি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় ও শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই কার্যকারী। তবে এই তালমিছরি থেকে উপকার পেতে হলে আমাদের আসল তালমিছরি চিনতে হবে। আসল তালমিছরি চেনার কিছু উপায় আছে। বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় তালমিছরির রং, ফ্লেভার, মিষ্টতা, ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য তালমিছরি বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। চলুন তাহলে আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানা যাক।

  • আসল তালমিছরি সাধারণত সোনালী ও হালকা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। 
  • আসল তাল মিছরি সঠিকভাবে জমার কারণে এর ভিতরে কোন বাতাস থাকে না ফলে এর ভেতরে কোন ফাপা অংশ দেখা যায় না অন্যদিকে নকল তাল মিস্ত্রি সঠিকভাবে না জমার কারণে এর ভিতরে ফাপা অংশ দেখা যায়। 
  • আসল তালমিছরি পানিতে দিলে খুব সহজেই গলে যায় কিন্তু নকল তালমিছরি পানিতে দিলে সহজে গলতে চায়না।
  • আসল তাল মিছরি খেতে মিষ্টি হলেও কখনো এটি অতিরিক্ত মিষ্টি কিংবা কৃত্রিম 7 7  বা গন্ধের অনুভূতি দেয় না অন্যদিকে নকল তাল মিশিতে অতিরিক্ত চিনি ও ফ্লেভার যোগ করায় নকল তাল মিছরিতে তাল মিশ্রির প্রকৃত ৭৭ পাওয়া যায় না।
  • তালমিছরিকে আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য নকল তালমিছরিতে কৃত্রিম রং মেশানো হয়। যার ফলে নকল তালমিছরি পানিতে মেশালে কৃত্রিম রং বোঝা যায় অন্যদিকে আসল তালমিছরি পানিতে মিশালে তা সঠিকভাবে পানিতে মিশে যায়।
  • আসল তালমিছরি সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় বাজারে আসল তালমিছরির দাম নকল তালমিছরির তুলনায় বেশি হয়।
  • তালমিছরি কেনার আগে অবশ্যই প্রস্তুতকারকের নাম, উৎপাদন মেয়াদ, উত্তীর্ণ তারিখ, প্রস্তুতকারকের লেভেল ও দাম ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
  • সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি তাল মিছরি কোন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান, মানুষ অথবা অনলাইন সাইট থেকে ক্রয় করেন।
  • আসল তালমিছরি সুতোযুক্ত হয়ে থাকে। বাজারে যে চিনির মিছরি পাওয়া যায় তাতে সুতো থাকে না। কিন্তু আসল তালমিছরিতে সুতো থাকে।
  • আসল তালমিছরি সহজে ভাঙ্গা যায় না।

তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

উপরে আমার আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এবার আমরা তাল মিছরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। তালমিছরি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী পুষ্টি গুন রয়েছে। তালমিছরি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় সহায়তা করে যেমন রক্তস্বল্পতা দূর করে, হাড় মজবুত করে, সর্দি কাশি সারাতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে, ক্লান্তি দূর করে, নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করে, ঘাড় মজবুত করে কিডনিতে পাথর দূর করে ও দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করে। এছাড়াও তালমিছরি অনেক উপকারিতা আছে।

রক্তস্বল্পতা দূর করতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি আমাদের শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে খুব ভালো কার্যকরী। যাদের রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রয়েছে তাদের জন্য তাল মিছরি খুবই উপকারী। তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য তালমিছরি বেশি উপকারী। আয়রন আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

হাড়ের ক্ষয়রোধে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধে করে সহায়তা করে। তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যা আমাদের হাড়ের জন্য খুবই উপকারী ও প্রয়োজনীয় উপাদান। আমাদের বয়সের সাথে সাথে নানান রকম হাড়ের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এই হাড়ের সমস্যায় তালমিছরি অনেকটা উপকার দেয়। তালমিছরি আমাদের হারকে হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ প্রতিরোধ করে। শিশুদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে তালমিছরি খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

পেট ও মুখের সমস্যা দূর করতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তাল মিশ্রি আমাদের পেটের সমস্যা ভালো করে হজম শক্তি ভজন উন্নতি করে। খাবার খাওয়ার পরে তালমিছরি খেলে খাবার পরিপাকে সহযোগিতা করে। তালমিছরি আমাদের গলা ব্যথা ও কাশির সমস্যা ভালো করে আরাম পাওয়া যায়। গরম পানিতে তালমিছরি মিশিয়ে কুলকুচি করলে গলার জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ দূর হয়। তালমিছরি রয়েছে এমন কিছু উপকারী পুষ্টি উপাদান যা আমাদের ফুসফুস ও গলার কফ দূর করতে সাহায্য করে।

শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। ।তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা উপাদান যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। তালমিছরি আমাদের শরীরে ক্ষারকরণ তৈরির মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি প্রধান উপাদান শোষণ মাত্রা বৃদ্ধি করে। তবে তাল মিছরি থেকে সঠিক উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে বাজার থেকে ভালো মানের তাল মিছরি কিনতে হবে।

মানসিক চাপ কমাতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

মানসিক চাপ কমাতে তালমিছরি উপকারিতা অনেক। তালমিছরি খেলে বা এর ঘ্রা নিলে আমাদের মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং মনকে শান্ত করে। তালমিছরি এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এজন্য শরীরকে ঠান্ডা রাখতে তালমিছরি খাওয়া যেতে পারে। তালমিছরি আমাদের শরীর ও মনের প্রশান্তি বয়ে আনে ।নবজাতকের ।তালমিছরি খাওয়ালে শিশু শান্ত থাকে ।

রক্ত পরিশোধন করতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি আমাদের রক্তকে পরিশোধন করতে পারে। তালমিছরি আমাদের রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে ভূমিকা রাখে। লিভার আমাদের শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করে থাকে আর এই লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।

সর্দি কাশি দূর করতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি আমাদের সর্দি কাশি দূর করতে পারে। এক টুকরো তাল মিছরি ও এলাস মুখে রেখে দিলে সর্দি ও কাশি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি চাইলে তাল মিছরি, এলাচ ও বাদাম দিয়ে এক ধরনের খাবার তৈরি করে রাখতে পারেন। এতে পরবর্তীতে কারো সর্দি কাশি হলে সে খাবার খেতে পারেন। তৈরির নিয়ম খুবই সহজ। একটি পাত্রে সমপরিমাণ তাল মিশ্রি ও বাদাম নিন, এগুলো ভালো করে পিষে  ফেলুন পরিমাণ মতো পানি দিয়ে জাল দিন। তার মধ্যে এলাচ ছিটিয়ে দেন মিশ্রণটি ভালোভাবে ফুটে উঠলে নামিয়ে একটি পাত্রে সংগ্রহ করুন। পরবর্তীতে কারোর সর্দি কাশি হলে এই খাবারটি খেলে উপকার মিলবে।

ডায়রিয়া রোগে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

উপরে আমার আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার জেনে আসা জাক ডায়রিয়া রোগীদের জন্য তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তালমিছরি খেলে ডায়রিয়া ও বমি হওয়ার জন্য শরীরে যে ক্ষতি হয় তা পূরণে সাহায্য করে। বারবার বমিও পাতলা পায়খানা হলে আমাদের শরীর থেকে নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়। এজন্য তাল মিছরি পানির সাথে গুলিয়ে খাওয়ালে শরীরে থেকে বের হয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইট এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। এবং শরীরের শক্তি পুনরায় ফিরে আসে।

ডায়াবেটিস রোগের জন্য তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

তালমিছরি ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুব ভালো কাজ করে। তালমিছরি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ চিনির তুলনায় কম থাকায় তালমিছরি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি ও মধুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তালমিছরি আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তালমিছরি অনেক উপকারী তবে আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

হজমের সমস্যায় তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা 

তালমিছরি আমাদের হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। আমাদের হজম শক্তি ভালো থাকলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তালমিছরি সাথে মৌরি খেলে আমাদের হজম শক্তিকে উন্নতি করে। তালমিছরিতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করে। তাই আমাদের হজম শক্তিকে ভালো রাখতে নিয়মিত রাত ও দুপুরে খাবার খাওয়ার পর মৌরির সাথে তালমিছরি খাওয়া উচিত।

বাচ্চাদের তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

বাচ্চাদের জন্য তালমিছরি বিভিন্ন দিক দিয়ে উপকারী হতে পারে। তালমিছরি যেহেতু মিষ্টি এক ধরনের খাবার সেজন্য বাচ্চারা তালমিছরিকে খুব সহজে পছন্দ করবে। বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ওষুধ খাওয়ানোর পরিবর্তে তালমিছরি খাওয়াতে পারেন এর ফলে সর্দি কাশিতে তালমিছরি উপকারিতা পাবেন। তাল মিস্ত্রিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকারী খনিজ উপাদান ও অ্যামাইনো এসিড যা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তালমিছরি বাচ্চাদের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত তাল মিছরি খাওয়া উচিত। কেননা তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। তাল মিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। রয়েছে ক্যালসিয়াম যা শিশুর হাড়ের গঠনে কাজ করে। তাল মিছরি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি তাল মিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। এজন্য গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত তাল মিছরি খাওয়া উচিত নয়।
আসল তালমিছরি চেনার উপায়-তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা


কিডনির পাথর দূর করতে তালমিছরি খাওয়ার উপকারিতা


তালমিছরি আমাদের শরীরের কিডনির পাথর দূর করতে ও কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনাকে কমাতে সহায়তা করে। তালমিছরি থাকা আন্টি অক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে কিডনিকে পরিষ্কার রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে তালমিছরি খুব উপকারে আসে।


তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা 

উপরে আমরা তালমিছরির উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা তালমিছারি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানব। তালমিছরি একটি খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি খাবার যা আমরা অনেকেই খেতে পছন্দ করি। এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। তালমিছরি খেলে আমাদের অনেক রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা আছে। তালমিছরির অতিরিক্ত ব্যবহার কিংবা ভুল ব্যবহার এর কারণে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা 

তাল মিছরি এক ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার। তাল মিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেট যা অতিরিক্ত খেলে আমাদের শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা বয়ে আনতে পারে। এজন্য যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের তালমিছরি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অথবা খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।

ওজন বৃদ্ধিতে তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা 

অতিরিক্ত মাত্রায় তাল মিছরি খেলে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। কেননা তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেট যা আমাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যাদের ওজন বেশি কিংবা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের তাল মিছরি না খাওয়ায় উচিত। খেলেও বিশেষগ্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।

অ্যালার্জি জন্য তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা 

তাল মিছরি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাল মিছরি খেলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের অন্য কোন খাবারে কিংবা তালের রসে অ্যালার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে তালমিছরি খেলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অ্যালার্জি হলে শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, ফুস্কুড়ির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে তাল মিছরি খেলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়।

হজমের সমস্যায় তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা 

অতিরিক্ত তাল মিছরি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাল মিছরি আমাদের হজম শক্তি উন্নতির জন্য কার্যকরী হলেও অতিরিক্ত খেলে আমাদের হজমে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হজম শক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

এছাড়াও কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তালমিছরির রং, ফ্লেভার, পরিমাণ ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যমিকেল ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এমনকি এতে এমন কিছু ক্ষতিকর ক্যমিকেল ব্যবহার করে থাকে যা খেলে আমাদের ক্যান্সার প্রযোন্ত হতে পারে। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে 

তালমিছরি পুষ্টি উপাদান

তাল মিছরি একটি খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। তাল মিছরি তে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা আমাদের নানান রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। তাল মিছরি আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে, হাড় মজবুত করে, চোখ ভালো রাখে, কিডনির পাথর দূর করে, হজম শক্তি উন্নতি করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, সর্দি কাশি ভালো করে ও রক্ত পরিষ্কার করে ইত্যাদি উপকার করে। তাল মিছরি তে রয়েছে

  • আয়রন 
  • ক্যালসিয়াম 
  • পটাসিয়াম 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • জিংক
  • কার্বোহাইড্রেট
  • আন্টি এক্সিডেন্ট
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স

এছাড়াও তালমিছরি রয়েছে নানান ধরনের উপকারী পুষ্টি গুণ যা আমাদের শরীরে নানান উপকারে কাজে লাগে।

তালমিছরি খেলে কি ওজন বাড়ে

ওজন বৃদ্ধি তাল মিছরি খাওয়ার অপকারিতা দিক হতে পারে। নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় তাল মিছরি খেলে ওজন বৃদ্ধির তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। তবে তাল মিছরি অতি ক্যালোরি যুক্ত খাবার হওয়ায় অতিরিক্ত তাল মিছরি খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাল মিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ভিটামিন ও মিনারেল যা পরিমিত মাত্রায় সেবনে আমাদের শরীরের ওজন ঠিক রাখার পাশাপাশি স্ব্যস্থ্যা গত বিভিন্ন উপকার হয়ে থাকে।

তালমিছরি খাওয়ার নিয়ম

তাল মিছরিতে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী পুষ্টি গুণ রয়েছে। যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। তবে তাল মিছরি থেকে সঠিক উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের তালমিছরি খাওয়ার নিয়ম মানতে হবে। 

  • যাদের সর্দি ও কাশি হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তালমিছরি টুকরো করে মুখে নিয়ে চুষে খেলে ভালো উপকার পাবেন।
  • তালমিছরি চুষে খেলে আমাদের শরীর ও মন শান্ত হয়।
  • গরম পানিতে তালমিছরি গুলে খেলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা সেরে যায়। 
  • এক কাপ গরম পানিতে তালমিছরি ও গোলমরিচ এর গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন এতে সর্দি কাশি ভালো হবে।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ দুধের সাথে তাল মিছরি খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যগত উপকারিতার সাথে সাথে ঘুম ও ভালো হবে।
  • সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই টুকরো পরিমাণ তাল মিছরি খেতে পারেন। এতে আমাদের হজম শক্তির উন্নতি হবে।

তবে তাল মিছরি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং আসল তালমিছরি চেনার উপায় জেনে বাজার থেকে ভালো মানের তাল মিছরি কিনতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে তাল মিছরি খেলে এ থেকে অবশ্যই উপকার পাওয়া সম্ভব।

তাল মিছরি কি 

তাল মিছরি আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ তাল গাছের রস থেকে তাল মিছরি তৈরি করে আসছে। আমাদের দেশে একটি নির্দিষ্ট সময় তাল মিছরি তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। তাল মিছরি হলো এক ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার। যা তাল গাছের রস থেকে তৈরি করা হয়। আমরা বিভিন্ন গাছের রস থেকে তৈরি গুড় ও মিছরি খেয়ে থাকি । তাল মিছরি সেই ধরনের খাবার যা তাল গাছের রস থেকে তৈরি হয়। তালের রস থেকে মিছরি তৈরির কিছু ধাপ আছে। 

প্রথমে তাল গাছ থেকে তালের রস সংগ্রহ করা হয়। পরে এই রসকে ভালো করে জাল দিয়ে ঘন করা হয়। পরবর্তীতে এ থেকে তৈরি হয় গুড় এই গুড়কে দানা দিয়ে তৈরি করা হয় তাল মিছরি। তবে বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা তাল মিছরির রং, ফ্লেভার, মিষ্টতা ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যমিকেল ব্যবহার করে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। তা নাহলে আমরা প্রতারণার শিকার হতে পারি।

তালমিছরি কিভাবে তৈরি হয় 

তাল মিছরি তৈরি করার মূল উপাদান হলো তালের রস। প্রথমে তাল গাছ থেকে তালের রস সংগ্রহ করা হয়। তাল গাছ থেকে তালের রস সংগ্রহ করার সময় কাল হয়ে থাকে সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষ কাল। যখন তালগাছের ফল কাটা হয় সেই ফল থেকে ধিরে ধিরে রস একটি পাত্রে জমা করা হয়। এই রসকে ভালো করে ছেঁকে পরিষ্কার করে একটি পাত্রে জাল দেওয়া হয়। এই ভাবে তালের রসকে জাল দিতে দিতে ঘন করে ফেলা হয়। 

এই ঘন রসকে আমরা গুড় হিসেবে চিনে থাকি। এই ঘন হয়ে যাওয়া রসকে দানা দেওয়া হয় যাতে এটা জমাট বেঁধে মিছরির আকার ধারন করতে পারে। দানা দেওয়া পরে এই রসের রং কিছুটা বাদামী আকার ধারন করে। এরপর এই রসকে জমাট বাঁধার জন্য বিভিন্ন আকারের পাএে রাখা হয়। পরবর্তী কিছু দিনের জন্য এই মিছরি জমাট বাঁধার জন্য রেখে দেয়। তাল মিছরি তৈরি হয়ে যাবার পর পরিষ্কার পাএে সংগ্রহ করা হয়।

তৈরিকৃত এই তাল মিছরি খেতে অনেক মিষ্টি এবং পুষ্টিকর। তাল মিছরি আমাদের খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের অনেক রোগ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। তবে বাজারে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী থাকার কারণে আসল তালমিছরি পাওয়া কঠিন। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে আমাদের প্রতারণার শিকার হতে হয় না।

দুলালের তালমিছরি দাম

ভারত থেকে আমদানি হওয়া দুলালের তালমিছরি আমাদের দেশে অনেক বিখ্যাত। আসল তালমিছরের কথা শুনলে আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে দুলালের তালমিছরি কথা। দুলালের  তালমিছরি তৈরি হয় খাঁটি তালের গুড় থেকে। আসল দুলালের তালমিছরি দাম কেজি পতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়ে থাকে। সময় ও স্থানভেদে এ দামের পরিবর্তন হতে পারে। তবে আমাদেরকে বাজার থেকে আসল দুলালের তালমিছরি চিনে কিনতে হবে।  

কেননা বাজারে অনেক দুলালের তালমিছরি নকল পণ্য পেতে পারেন। যা দেখতে হুবহু আসল দুলালের তালমিছরি মতন। সুতরাং আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে তারপর বাজার থেকে তালমিছরি কেনা উচিত। তা না হলে আমরা আসল তালমিছরি কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হতে পারি।

উপসংহার

উপরে আমরা আসল তালমিছরি চেনার উপায় ও তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি তালমিছরি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তালমিছরি খাওয়ার অপকারিতা ও হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত তালমিছরি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকার হতে পারে।

এছাড়াও বাজারে অনেক নকল তালমিছরি কিনতে পাওয়া যায়। এই গুলোতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এজন্য আমাদের আসল তালমিছরি চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে বাজার থেকে আসল তালমিছরি কেনা উচিত। তাহলে আমরা এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে বেঁচে যাবো।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url