সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয়-ডায়াবেটিস এর লক্ষণ


আপনি যদি সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় ও ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে সঠিক পোস্টে আসছে ক্লিক করেছেন। ডায়াবেটিস বর্তমান বাংলাদেশের খুবই পরিচিত একটি রোগ। ডায়াবেটিস সম্পর্কে আমার ভালোভাবে জানাতে পারলে আমার এর ভয়াবহতা অনেক অংশে কমিয়ে আনতে পারি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৫ কোটি যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সুতরাং আমাদের এই প্রত্যেকেরই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিত। চলুন তাহলে সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় ও  ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কারণ প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসা যাক।

পেইজ সূচিঃ


সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস

সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় এটা নির্ভর করে আমাদের বয়সের উপর। সাধারণত বিভিন্ন বয়সের মানুষের সুগার লেভেল বিভিন্ন হয়। অনেকেই মনে করে বয়স ৪০ এর উপর হলে সুগার লেভেল পরীক্ষা করা উচিত তবে বর্তমানে অনেক কম বয়সী ছেলে মেয়েদের ভেতর ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। সুতরাং যে কোন বয়সের মানুষের শরীরে সুগার লেভেল চেক করা উচিত।

কোন বয়সে রক্তে শর্করা/সুগারের মাত্রা কত হওয়া স্বাভাবিক?

সাধারণত বিভিন্ন বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে সুগারের লেভেল বিভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।
  • ছয় বছর বয়সের নিচে শিশুদের রক্তের সুগার লেভেল হওয়া উচিত ৮০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম।
  • ছয় থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের সুগার লেভেল থাকা উচিত ৮০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম।
  • ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সবাই লেভেল সুগার লেভেল ৭০ থেকে ১৫০ হওয়া উচিত।
  • ২০ বছরের উপরে থাকা মানুষদের ফাস্টিং সুগার লেভেল থাকা উচিত ১০০ মিলিগ্রাম এর নিচে।

কীভাবে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের শরীরে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ঔষধ খেলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ থাকে না এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ জীবন যাপনের। আপনার খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত হাটা ও বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা সুপার লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস কয় প্রকার 

ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার যেমন:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস 

টাইপ ১ ডায়াবেটিস কি

টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর প্রধান কারণ শরীরের অগ্ন্যাশয় ঠিক ভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না।এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই রোগ শিশু ও কিশোর বয়সে বেশি হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হয়। শরীরে বেশি আয়রন জমে গেলে, বিভিন্ন সংক্রমণ, খাবারের বিষক্রিয়া,অগ্ন্যাশয়ের সিস্টিক ফাইব্রোসিস ও অগ্ন্যাশয় জনিত সমস্যার কারণে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হতে পারে।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ:

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগা।
  • হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকে।
  • অস্বাভাবিক ভাবে খিদে বেড়ে যাওয়া।
  • শরীর অত্যাধিক দুর্বল ও ক্লান্ত লাগে।
  • দৃষ্টি শক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • ঘন ঘন বিভিন্ন সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি পুরো পুরি বন্ধ হয়ে যায়।যার ফলে এই রোগীদের সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হবে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি

বাংলাদেশে ১০০ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ৯০ জন রোগী টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত।টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ শরীর পর্যন্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি করলেও ঠিক মতো কাজ করে না।এই রোগ ধীরে ধীরে শুরু হয় তাই অনেক সময় এই রোগের লক্ষণ গুলো সেই ভাবে বোঝা যায় না।এটি প্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়।এটি ঔষধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ:

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঘন ঘন বিভিন্ন সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ‌।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • শরীর অত্যাধিক দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
  • প্রচুর পানি পিপাসা লাগা।
  • খুদা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • উপরের এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে শরীরে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ 

ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরের অগ্ন্যাশয় ঠিক ভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা।এর ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাওয়া বা তৈরি না হওয়ায় কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।

  • ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
  • পেটে চর্বি জমা।
  • সারাদিন অলস ভাবে বসে থাকা বা শারীরিক পরিশ্রম না করা।
  • বেশি রিফাইন খাবার খাওয়া।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেমন: অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া, ফাস্টফুড বা ভাজা পোড়া খাবার খাওয়া।
  • অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া।
  • বয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এছাড়াও বংশ গত কারণে ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার 

বর্তমান পৃথিবীতে ডায়াবেটিস পুরোপুরি সেরে ফেলার কোন ঔষধ বা নিরাময়ক এখনো তৈরি হয়নি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো।

  • ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে।
  • চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • মাছ, মাংশ,ডিম ,দুধ, শাকসবজি ও বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • অলস জীবন যাপন পরিহার করতে হবে।
  • মানসিক চাপ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়িয়ে দেয় এজন্য মানসিক চাপ কমাতে হবে।
  • সকল প্রকার মাদক দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
  • সুতরাং সঠিক ঔষধ ও ভালো জীবনধারার মধ্যে মে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
  • ডায়াবেটিস  প্রতিরোধ উপায় 
  • আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপন। আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও সুন্দর জীবন যাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা।
  • শরীরের ওজন ঠিক রাখা।
  • চিনি জাতীয় খাদ্য পরিহার করা।
  • যেকোন ধরনের প্রসেস ফ্রুড এড়িয়ে চলা।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন মাছ, মাংশ, ডিম, শাকসবজি , ফলমূল আঁশজাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া।
  • অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া।
  • যাদের পরিবারের অন্য কোন সদস্যের ডায়াবেটিস আছে তাদের নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা।
  • যেকোন ধরনের মাদক দ্রব্য পরিহার করা।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল আছে তাদের সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখা 

ডায়াবেটিস রোগ পুরোপুরি সেরে ফেলা সম্ভব 

না ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে রোগীকে সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হবে।

তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস পুরোপুরি সেরে ফেলা না গেলেও বিভিন্ন ঔষধ ও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন( FAQ )

সুগারের মাত্রা কত হলে বুঝবেন ডায়াবেটিস?

সাধারণত খালি পেটে রক্তে শর্করা মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম এর উপর থাকলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে।

ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

ভরা পেটে রক্তের সুগার লেভেল ১৪০ এর নিচে থাকলে সেটা স্বাভাবিক।

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

খালি পেটে সুগারের লেভেল ১০০ মিলিগ্রাম নিচে থাকা স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থায় পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

গর্ভাবস্থায় সাধারণত ৯৫ মিলিগ্রামের নিচে সুগার লেভেল থাকা স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়?

হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এর কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই তবে রক্তের শর্করার মাত্রা ৩০০ মিলিগ্রাম এর উপরে হয়ে গেলে মানুষ মারা যেতে পারে।

শেষ কথা: সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয়- ডায়াবেটিস এর লক্ষণ।

উপরে আমার সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় ও ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি ডায়াবেটিস বর্তমান পৃথিবী মানুষের মধ্যে খুবই পরিচিত একটি রোগ যা মানুষের শরীরে নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি করে। বর্তমানে সব বয়সের মানুষের ভেতর এই রোগটি দেখা যাচ্ছে। তবে সঠিক জীবন যাপন ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কারুর শরীরে ডায়াবেটিস দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url