ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

পেইজ সূচিঃ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ 

কিছু সাধারণ প্রশ্ন:

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান। ডেঙ্গু জ্বর বর্তমানে বাংলাদেশের একটি অন্যতম পরিচিত ভাইরাস জনিত রোগ। প্রতিবছর আমাদের দেশে এর ব্যাপক প্রকোপ দেখা যায়। বিশেষ করে বর্ষকাল ও বর্ষার পরবর্তী সময়ে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। 

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস যা এডিস মশার কামড়ে ছড়িয়ে থাকে। চলুন তাহলে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসা যাক । শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।

ডেঙ্গু রোগের কারণ কী

ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান কারণ হলো ডেঙ্গু ভাইরাস যা এডিস মশার কামড়ের ফলে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।এডিস মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়।এডিস মশা জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে বেশি জন্মায়।

ডেঙ্গু ভাইরাস এর চারটি সেরোটাইপ আছে যেমন: ডিএনএ ১, ডিএনএ ২, ডিএনএ ৩ ও ডিএনএ ৪।এর যেকোন একটির কারণে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো এডিস মশা।এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির শরীর থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে আনে পরবর্তীতে তা অন্য কারোর শরীরে ছড়িয়ে থাকে। এজন্য ডেঙ্গু জ্বরের জন্য প্রধানত এডিস মশাকে দায়ী করা হয়। এই এডিস মশা সাধারণত ভাঙ্গা টবে, পড়ে থাকা মালা, বিভিন্ন ভাঙ্গা আসবাবপত্র , টায়ার অথবা যেকোন পরিত্যক্ত স্থানের স্বচ্ছ পানিতে বেশি জন্মায়। এডিস মশা সকাল ও বিকালের দিকে বেশি কামড়ায়।

অপরিষ্কার পরিবেশ নর্দমা খোলা ড্রেন বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি মশার প্রজননের সুযোগ তৈরি করে।

যেখানে সেখানে পানি জমিয়ে রাখা সময় মতো পানি ফেলে না দেওয়া মশারি ব্যবহার না করা এছাড়া মশা নিধনে উদাসীনতার কারণে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত তিন থেকে বার দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ রোগের মতো মনে হতে পারে তবে কিছু বিষয় লক্ষ্য করলে ডেঙ্গু রোগ সহজে সনাক্ত করা যায়।

প্রাথমিক অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

লক্ষণ নিচে দেওয়া হল:

  • হটাৎ করে ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর আসা।
  • চোখের চারপাশ সহ তীব্র মাথা ব্যথা করা।
  • চোখে ব্যথা অনুভব করা। বিশেষ করে চোখ নড়া চড়া করার সময়।
  • শরীর ও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভব করা।
  • শরীরের চামড়ায় ফুসকুরির মত ছোট ছোট লালচে দাগ দেখা যায়।
  • ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।
  • বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
  • পেট খারাপ হতে পারে।
  • শরীর অত্যাধিক দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করলে

কারুর শরীরে যদি উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে হতে পারে এটা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন। তবে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করলে এর কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হল।

  • শরীরের তাপমাত্রা হটাৎ বেড়ে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত বমি হওয়া 
  • পেশাব বা মলের সাথে রক্ত আসা
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া (শ্বাসকষ্ট)।
  • শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়া।
  • শরীর অত্যাধিক দুর্বল হয়ে পড়া।
  • তীব্র মাথা ঘুরা।
  • মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়া।
  • পেট ফাঁপা।
  • পেটের ভেতর তীব্র ব্যথা করা।

ডেঙ্গু জ্বর প্রথম অবস্থায় সাধারণ জ্বরের মতো মনে হলেও কিছু দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু রোগের তীব্র লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই উপরের এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার 

  • ডেঙ্গু রোগের এখন অবধি কোন ঔষধ বা ভ্যাকসিন তৈরি হয় নি। তাই প্রতিকার বলতে বোঝায় রোগীকে ঠিক করে যত্ন নেওয়া সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া ও রোগীকে ডেঙ্গু ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করা।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। যার কারণে রোগীর শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি,সেলাইন ও ফলের রস খাওয়াতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সাধারণত প্রচুর জ্বর থাকে ।এই জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে কখনো অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ঔষধ সেবন করা উচিত নয় কেননা এগুলো রক্ত ক্ষরণের ঝূঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সিবিসি পরিক্ষা করতে হবে।
  • যদি ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যায় , শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় কিংবা শরীরের কোন অংশ দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে এজন্য রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন:

ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি?

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী জীবাণু হলো ডেঙ্গু ভাইরাস।এই ভাইরাসটি ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারভুক্ত। ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশার কামড়ে ছড়িয়ে থাকে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে 

ডেঙ্গু রোগে কিছু মানুষ তুলনা মূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

  • বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। 
  • শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরে বেশি ঝুঁকিতে থাকে কেননা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরো পুরি বেড়ে ওঠে না।
  • বয়স্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে থাকে।
  • যাদের আগে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তাদের মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
  • যারা উচ্চ রক্তচাপ , ডায়াবেটিস কিডনি বা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কি কি করণীয়

আমারা জানি কোন রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। এজন্য আমাদের শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধার আগে তা প্রতিরোধ করতে হবে।
  • মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো ‌।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশারির ভেতর রাখা।
  • ফুলের টব খালি পাএসহ বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা।
  • যথা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখা, বিশেষ করে ফুল হাতা পোশাক পরা।
  • মশার কয়েল অথবা স্প্রে ব্যবহার করা।
  • ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে আমাদের জনগণকে সচেতন করতে হবে।
  • যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।
  • বাড়ির আশেপাশে ড্রেন নর্দমা সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের ধরন

ডেঙ্গু জ্বর মূলত একটি ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয়। ডেঙ্গুর সংক্রামনের উপর ভিত্তি করে ডেঙ্গুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন:

  1. সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর
  2. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার
  3. ডেঙ্গু শক সিনড্রোম

লক্ষণঃ

  • সাধারণত হটাৎ ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রিরও বেশি জ্বর আসা।
  • তীব্র মাথা ব্যথা করা।
  • চোখের পেছনে ব্যথা, চোখ নড়া চড়া করলে ব্যথা অনুভব করা।
  • শরীর ও জয়েন্টে ব্যথা।
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুস্কুড়ির মত ছোট ছোট লালচে দাগ হওয়া ।

উপরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে এটা সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার: 

এটি ডেঙ্গুর গুরুতর অবস্থা। রক্ত ক্ষরণ এই ডেঙ্গু জ্বরের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

  • সাধারণত নাক দিয়ে রক্ত পড়া ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া।
  • শরীরে ফুস্কুড়ির মত লালচে দাগ হওয়া।
  • প্লেটলেট দ্রুত কমতে থাকে ফলে রক্ত ক্ষরণ বেশি দেখা দেয়।
  • শিশু ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোগীদের এই রোগ বেশি হয়।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: 

এটি ডেঙ্গু রোগের সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা।

  • রক্ত চাপ হটাৎ অনেক কমে যায়।
  • রোগী শকে চলে যায়।
  • তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

এই ধরনের রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিলে রোগীর প্রাণ হানী ঘটতে পারে।

কোন মশা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয় ?

এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয়।


যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়?

ডেঙ্গু জ্বর হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। ডেঙ্গু জ্বরে গায়ে ব্যথা হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যাবে না। এছাড়াও যাদের হার্ট, লিভার ও কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের প্যারাসিটামল ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?

ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে অতিরিক্ত জ্বর ও স্বাস্থ্যর অবস্থা খারাপ হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশা সাধারণত ভোর সকাল ও সন্ধ্যার সময় কামড়ায়। এরা অন্ধকারে কামড়ায় না।

ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল?

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাসে বেশি দেখা যায়।

ডেঙ্গু হলে কিভাবে বুঝব?

ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত ১০২ ডিগ্রির বেশি জ্বর থাকে এছাড়াও বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ও মাথা ব্যথা সহ চোখের পেছনে ব্যথা হয়।

ডেঙ্গু রোগের ঔষধ কি?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল বা টাইলেনল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে?

সাধারণ অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা দুই সপ্তাহের বেশি সময় থাকতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

হ্যাঁ ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে। তবে ঠান্ডা পানি ও বেশি সময় ধরে শরীর ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url