ইস্তেগফার মানে হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তেগফার হলো কোন প্রবৃওির
বশবরতী হইয়ে পদস্থলন করলে লজ্জিত ও অনুতপ্ত মনে অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে তওবা বলে। কোন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য মনে
দৃঢ সংকলন উদয় হলে অপরাধী তার খারাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে।
মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনের চলাফেরায় ইচ্ছাকৃত অথবা
অইচ্ছাকৃত ভাবে নানা ধরনের ভুল ও অপরাধ করে থাকি। এই অপরাধ গুলো থেকে আমাদের
প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এবং আমরা যদি ভুল বশত কোন অপরাধ করে
থাকি তাহলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহ তওবা
কারী দের পছন্দ করে।
পেইজ সূচি: সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ ও এর ফজিলত
সাইযেদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ
উচ্চারন:*আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা
‘আব্দুকা’ আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্ব‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন
শাররি মা সানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী
ফাগফিরলী ফাইন্নাহূলা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা*
অর্থ:*’হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি
আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া
অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে
তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে
স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে
ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।
আরো পড়ুন:
ছেলেদের আধুনিক ইসলামিক নাম
আরো পড়ুন:
মেয়েদের আধুনিক ইসলামিক নাম
আরো পড়ুন:
আরবি ও ইংরেজি ১২ মাসের ক্যালেন্ডার
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত
কুরআন কারীমে মুমিন বান্দাদের বারবার তওবা ও ইস্তেগফার করার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে। তওবা ও ইস্তেগফারের জন্য আল্লাহর পক্ষ্য থেকে ক্ষমা, পুরষ্কার ও
মর্যাদা ছাড়াও জাগতিক উন্নতি বরকতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপ ভাবে
বিভিন্ন হাদীসে ইস্তেগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইস্তেগফার আল্লাহর অন্যতম
যিক্র। যিকির এর সাধারণ ফজিলত ইস্তেগফার কারী লাভ করবে।
এছাড়াও ইস্তেগফারের অতিরিক্ত মর্যাদা ও সাওয়াব রয়েছে। আবু হুরায়রা বলেছেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন: আল্লাহর কসম আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারের ও বেশি
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তওবা করি।
তওবা ও ইস্তেগফার আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দের একটি ইবাদত। তাই আমাদের প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও তিনি দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও
ইস্তেগফার করতেন। অনুরূপ ভাবে ইমানের পর নামাজ প্রধান ও সর্বশেষ ইবাদত হওয়া
সত্ত্বেও এই নামাজের পর তিন বার ইস্তেগফার পড়া সুন্নত। অর্থাৎ ইস্তেগফার শুধু
পাপের পরেই নয় বরং ইবাদতের পরেও করা হয়।
ইস্তেগফার সম্পর্কে কোরআন এর কিছু আয়াত
হজের পর ইস্তেগফারের করার বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ আছে ( হজ শেষ করে) তারপর তোমরা
বেরিয়ে পড় , যেভাবে মানুষ চলে যাচ্ছে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।( সূরা বাকারার ১৯৯ নং আয়াত)
ইস্তেগফার সম্পর্কে কোরআনে আছে তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো,
নিশ্চয়ই তিনি মহা ক্ষমাশীল।( সূরা নূহ ১০ নং আয়াত)
অতঃপর তোমার রবের প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করো।( সূরা নাসর আয়াত নং ৩)
আর আল্লাহ তায়ালা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায়, আর
আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তেগফার করে।( সূরা আনফাল আয়াত ৩৩)
তওবা সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটি তওবা করো
আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপ সমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে ঝর্না সমূহ প্রবাহমান। ( সূরা তাহরিম আয়াত নং ৮)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তওবা কারী দের ও পবিত্রতা অর্জন কারী দের ভালোবাসেন।(
সূরা বাকারা আয়াত নং ২২২ )
আল্লাহ বলছেন হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন হে আমার
বান্দারা যারা নিজেদের সওার প্রতি সীমাহীন জুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত হতে
নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি
ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।( সূরা জুমার আয়াত নং ৫৩)
ইস্তেগফার সম্পর্কে কিছু হাদীস
ইস্তেগফার সম্পর্কে হাদীসে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন, যে যত মুমিন বান্দা
জন্য ইস্তেগফার করবে, সে তাদের সবার সমান নেকি লাভ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেছেন সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার ক্ষমা প্রার্থনার
শ্রেষ্ঠ দোয়া। কোন ব্যক্তি যদি পূর্ন বিশ্বাসের সাথে প্রতিদিন সকালে
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করে এবং সেদিন যদি সে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। আবার যদি কোন ব্যক্তি সন্ধ্যায় পূর্ন বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া টি
পাঠ করে এবং রাতে সে ব্যক্তি মারা যায় তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম বুখারী শাদ্দাদ বিন আওস(রা:)থেকে বর্ণনা করেন তিনি নবি সাল্লাল্লাহু (আ:
)থেকে বর্ণনা করেন যে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ট ইস্তিগফার) হল:
তিনি আরো বলেছেন যে ব্যক্তি দিনের বেলায একীনের সাথে এ বাক্য গুলো বলবে এবং
সেদিন সন্ধার আগে মারা যাবে সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসি হবে।আর যে ব্যক্তি
রাতের বেলায একীনের সাথে এ বাক্য গুলো বলবে এবং সকাল হবার আগে মারা যাবে সে
ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসি হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হে মানব সকল তোমরা আল্লাহর নিকট
ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি। তিনি আরো বলেন সকল মানব
সন্তানই গুনাগার তবে গুনাগারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবা কারিরা ।
তওবার সুফল সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন গুনাহ থেকে
তওবা কারী বেগুনহা ব্যক্তির মতো।
কি দোয়া পড়ে তওবা করতে হবে
আমাদের দেশের মানুষকে তওবার দোয়ার নামে যে দোয়া শেখানো হয় তা হলো (
আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যামবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা
কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলায়্যিল আযীম।
এটা একটা দোয়া কিন্তু কোরআন হাদিসে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তার মানে এটা
একটি হুজুরের বানানো দোয়া
যেই দোয়া পড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তওবা করতেন ও আমাদেরকে
পড়তে বলেছেন সেটা হলো ( আস্তাগফিরুল্লাহা হাল আযীমাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা
হুওয়াল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি )
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য
উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তার কাছে তওবা করছি।
মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে
দেবেন যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামি হয়।
ইস্তেগফারের গুরুত্ব
ইস্তেগফার এর সবচেয়ে বড় বিষয় মুমিন মনের উপলব্ধি। মানুষের মনের অতি পছন্দনীয়
কাজ অন্যর অন্যায় গুলো বড়ো করে দেখা এবং নিজের অন্যায় গুলো ছোট করে দেখা। আমরা
একাকী বা একএে চিন্তা ভাবনা বা গল্প করি তখন সাধারণত অন্যর অন্যায় গুলো নিয়ে
আলোচনা করি। মুমিন বান্দার আত্মার ধ্বংসের এটি অন্যতম কারণ। মুমিন বান্দা সবসময়
নিজের পাপের কথা চিন্তা করবে। এমনকি আল্লাহর অগনিত নিয়ামতের বিপরীতে তারা
ইবাদতের দুর্বলতাকে পাপ হিসেবে গণ্য করে সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করতে হবে। এই পাপ বোধ নিজেকে সংকুচিত করার জন্য নয়। এই পাপ বোধ আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চেয়ে নিজেকে পবিত্র, ভারমুক্ত ও আল্লাহর নিকট পৌঁছানোর জন্য।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ বলেছেন মুমিন বান্দা তার পাপকে বড়ো করে দেখেন।যেন তিনি
পাহাড়ের নিচে বসে আছেন, ভয় পাচ্ছেন যেনো যে কোন সময় পাহাড়টি তার উপর ভেঙে
পড়ে যাবে। অন্যদিকে পাপি ব্যাক্তি তার পাপকে অনেক হালকা ভাবে দেখবে যেন একটি
উড়ন্ত মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে ,হাত নাড়তেই উড়ে যাবে।
সরাসরি এই ইস্তেগফার কোন হাদীস এ পাওয়া যায় না। তবে এই বাক্য দ্বারা ইস্তেগফার
করা যাবে। কেননা মুমিন বান্দা যেকোন ভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে
পারে। ভাষা বা বাক্যর চেয়ে মনের অনুশোচনা ও আবেগ বেশি প্রয়োজন।
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো বাক্যে ব্যবহার করা বেশি
উওম।
লেখকের মন্তব্য
আল্লাহর হক আল্লাহ মাফ করবেন কিন্তু বান্দার হক বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ কখনই
মাফ করবেন না। তাই তওবা ইস্তেগফারের সাথে সাথে বান্দার হক পরিশোধ করা বা ক্ষমা
চেয়ে নেওয়া আবশ্যক। আমাদের পাপ যত ছোট হোক না কেন আমাদের আল্লাহর নিকট সবসময়
তওবা করা উচিত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কোন পাপ না থাকা সত্ত্বেও
তিনি প্রতি দিন ১০০ বার আল্লাহর নিকট তওবা করতেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url